অন্যান্য
সিলেট ও সুনামগঞ্জে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় এবার আরো ৮ জন মারা গেছেন। শনিবার দিবাগত রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত পৃথক সময়ে বজ্রপাতে তাদের মত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৩ জন ও সুনামগঞ্জের ৫ জন রয়েছেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে ৭ জন নিহত হয়েছিলেন। সপ্তাহ পেরুতেই ফের বজ্রপাতে সিলেট বিভাগে এবার প্রাণ গেল আরো ৮ জনের।
জানা গেছে, সিলেটে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার ভোরে উপজেলার বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের সাড়ইল গ্রাম সংলগ্ন ডুবির হাওরে, দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার কাটিমারা গ্রামে ও কোম্পানীগঞ্জের রাজনগরে ৩টি পৃথক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
বিশ্বনাথে নিহত রেদওয়ান আহমদ (১৯) সাড়ইল গ্রামের ওলিউর রহমানের ছেলে ও সিলেট এমসি কলেজের বিএসএস ১ম বর্ষের ছাত্র। সিলেট সদর উপজেলায় নিহত আনছার আলী (৫৫) পেশায় দিনমজুর ও কোম্পানীগঞ্জে মারা যান এক যুবক।
বিশ্বনাথে নিহতের ভাই সুফিয়ান আহমদ জানান, গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে মাছ ধরার উদ্দেশ্য আমরা পুকুর সেচকালে বিকট শব্দ হলে আমরা ২ ভাই পুকুরপাড়ে লুটিয়ে পড়ি। আমাদের অন্য সহযোগীরা ঝাপ দেন পানিতে। জ্ঞান ফিরলে উঠে দেখি, ঝলসে গেছে ভাইয়ের মুখের একপাশ। পরে প্রতিবেশী ও স্বজনদের সহায়তায় তাকে সিলেট নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফরিদ আহমেদ বলেন, দুপুরে নিজ বাড়ির পাশে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আনছার আলী। তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিলো না। তিনি ঠেলাগাড়ি চালানো, দিনমজুরসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করতেন। বজ্রপাতের আঘাতে তার শরীর ঝলসে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রাজনগর স্কুলের পাশের মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান মাসুক আহমেদ (৪১)। মাসুক উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্য রাজনগর গ্রামের কনু মিয়ার ছেলে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে সুনামগঞ্জে শনিবার রাত থেকে বৃষ্টিসহ বজ্রপাত শুরু হয়ে রোববার দিনভর হয়েছে। এরমধ্যে রোববার ভোর থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বজ্রপাতে ৩ উপজেলার ৪ জেলের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে দোয়ারাবাজারে মাছ ধরার সময় ২ জেলে, জামালগঞ্জে ১, ছাতকে ১ জন মারা যান। এদিকে বিশ্বম্ভরপুরে আরেকজন মারা গেছেন। তবে তার মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। বজ্রপাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার মৃত্যু হতে পারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল ৭ টায় দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের পলিরচর গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে জালাল মিয়া (৩০) ও একই গ্রামের নুরুল হকের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৮) বাড়ীর পাশের হাওরে মাছ ধরতে যায়। এসময় বজ্রপাতের ঘটনায় মৃত্য ঘটে তাদের।
এদিকে জামালগঞ্জে ভোর রাতে আরেক বজ্রপাতের ঘটনায় শরিফ মিয়া (৩৫) নামের আরেক জেলের মৃত্যু ঘটেছে। তিনি উপজেলার কালাগোজা গ্রামের আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে। বাড়ীর পাশের নয়াহাওরে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে ঐ জেলে মারা যান।
এছাড়াও ছাতক উপজেলার ৩নং সদর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা সুন্দর আলী নামে আরেক জেলে মারা গেছেন। বাড়ির পাশের হাওরে সকালে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে শিকার হন তিনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অপরদিকে বিশ্বম্ভরপুরে ব্রজপাতে নিহত ব্যক্তির সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ ধারণা করছেন বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মৃত্যু বরণ করেছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা ব্রজপাতে নিহত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন রোববার বিকেলে দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সুনামগঞ্জের ৩ উপজেলায় বজ্রপাতে ৪ জন জেলে মারা গেছেন। এছাড়া বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একজন মারা গেছেন। মৃতদের ব্যাপারে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ঢাকা টেলিগ্রাফ এর দায়ভার নেবে না।