অন্যান্য
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের শরিফাবাদ গ্রামের ভ্যানচালক কবির বেপারীর স্ত্রী কল্পনা বেগম। প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগেই ঘরদোর ঝাড়– দেওয়া, গরু-বাছুর দেখাশোনা, সন্তানদের ঘুম থেকে তুলে হাত-মুখ ধোয়ানো ও গোছল করানো, তারপর সকালের খাবার রান্না করতে বসেন। সারাদিন ঘরের কাজেই ব্যস্ত থাকেন তিনি। স্বামীর রোজগারেই চলে তাদের, যাকে বলে- দিন এনে দিন খাওয়া সংসার। অথচ সেই হতদরিদ্র নারী কল্পনাকে আয়কর পরিশোধের নোটিশ
দিয়েছে রাষ্ট্র! শুধু তিনিই নন, তার মতো আরও তিন নারীর নামেও একই নোটিশ দেওয়া হয়েছে বরিশাল উপকর কমিশনার কার্যালয় থেকে। গত জুলাই ও আগস্টে আসা এসব নোটিশ পেয়ে চরম হতাশ দরিদ্র পরিবারগুলো। আর এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য।
আয়কর পরিশোধের নোটিশপ্রাপ্ত অন্য গৃহিণীরা হলেন- শরিফাবাদ গ্রামের মাহেন্দ্রাচালক ফারুক হোসেনের স্ত্রী সেলিনা বেগম, দিনমজুর মোহসিন বেপারীর স্ত্রী সুবর্ণা মোহসিন ও বিল্বগ্রামের দিনমজুর চাঁনমিয়া সরদারের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। এর মধ্যে কল্পনা, সেলিনা ও সুবর্ণা তিন সহোদরের স্ত্রী। নোটিশে তাদের গ্রাম মাহিলাড়া উল্লেখ করা হলেও মূলত তারা শরিফাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী এবং বরিশাল কর কমিশন কার্যালয় সূত্র জানায়, মাহিলাড়া গ্রামের কল্পনা বেগম ও সুবর্ণা মোহসিনকে গত ২৮ জুলাই, একই গ্রামের সেলিনা বেগমকে ২২ আগস্ট এবং বিল্বগ্রামের মনোয়ারা বেগমের নামে ২৪ আগস্ট বরিশাল উপকর কমিশনার কার্যালয় থেকে উপকর কমিশনারের স্বাক্ষরে আয়কর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে কল্পনা বেগম ও সুবর্ণা মোহসিনকে আয়কর পরিশোধ না করায় কেন জরিমানা করা হবে না, তার কারণ দর্শানোর জন্য আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এবং মনোয়ারা বেগমকে ৭ সেপ্টেম্বর (আজ) মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর সেলিনা বেগমকে আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নোটিশে।
গৃহিণী সুবর্ণা মোহসিন জানান, তার স্বামী একজন দিনমজুর। তাদের পরিবারে দুটি প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে। বসতভিটে ছাড়া তাদের আর কোনো সম্পত্তি নেই। এর পরও আয়কর পরিশোধের জন্য আয়কর অফিস থেকে তার নামে রাষ্ট্রীয় খামে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। কল্পনা বেগম জানান, তার স্বামী একজন ভ্যানচালক। এমন কোনো সম্পদ তাদের নেই যে, তার নামে আয়কর পরিশোধের জন্য সরকারি চিঠি ইস্যু হতে পারে। একই কথা জানিয়েছেন বিল্বগ্রাম এলাকার দিনমজুর চাঁনমিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। সেলিনা বেগম জানান, তার স্বামী একজন মাহেন্দ্রাচালক। অথচ তার নামে আয়কর পরিশোধের জন্য নোটিশ এসেছে। এমনকি আয়কর পরিশোধ না করায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে মর্মেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয় মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, আয়কর পরিশোধের জন্য নোটিশপ্রাপ্ত চার গৃহিণীই হতদরিদ্র। এর মধ্যে সুবর্ণা মোহসিন ও সেলিনা বেগমের স্বামীর নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির রেশন কার্ড (ভিজিএফ) দেওয়া হয়েছে। অপর দুই গৃহিণীর স্বামীও দিনমজুর। তাদেরকেও সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয়। হতদরিদ্র পরিবার চারটিকে আয়করের আওতামুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখা প্রধানের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলেও জানান। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আয়কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিবার চারটিকে আয়করমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার সদর দপ্তর (প্রশাসন) মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, যদি কেউ জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করে ই-টিআইএন গ্রহণ করেন, নিয়মানুযায়ী তাকে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এ ক্ষেত্রে ওই চারজনের আইডি কার্ড ব্যবহার করে কেউ হয়তো আয়করের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। ফলে তাদের কর রিটার্ন দাখিলের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এখন ভুক্তভোগীরা তাদের কাগজপত্র নিয়ে অফিসে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ঢাকা টেলিগ্রাফ এর দায়ভার নেবে না।